মডেল: টিনি গাঙ্গুলি
প্রাচীনকালে রূপচর্চার প্রধান উপকরণ ছিল জলপাই তেল, খড়িমাটি, ফুল ও পাতার নির্যাস, সামুদ্রিক লবণ, ফলের রস, সুগন্ধি, মধু, তেল ও জাফরান ছাড়াও অনেক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান। এখন প্রায় সবাই কমবেশি ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চা করতে চান। রূপচর্চার ধরনে এসেছে অনেক পরিবর্তন
লাবণ্যময় ত্বকের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত আছে রূপচর্চার নানা উপায়। সৌন্দর্যচর্চার আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে আজও মানা হয় মিসরীয় রানী ক্লিওপেট্রাকে। ইতিহাস বলে, ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখতে দুধ আর জাফরানে গোসল, ত্বকে মধু, ফুল আর মসলার তেল, সামুদ্রিক লবণে স্ট্ক্রাব করতেন তিনি। আর চুলের যত্নের জন্য তখন প্রচলিত ছিল বিভিন্ন রকম ঔষধি উপাদান ও প্রাকৃতিক তেল। প্রাচীনকালে রূপচর্চার প্রধান উপকরণ ছিল জলপাই তেল, খড়িমাটি, ফুল ও পাতার নির্যাস, সামুদ্রিক লবণ, ফলের রস, সুগন্ধি, মধু, তেল ও জাফরান ছাড়াও অনেক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান।
সূর্যালোক থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মি 'এ' এবং 'বি' ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। অতি বেগুনি রশ্মি 'এ' ত্বকে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি তৈরি করে এবং 'বি' ত্বক-ক্যান্সার সৃষ্টি করে। 'এ' ও 'বি' উভয় রশ্মিই ত্বকের মসৃণতা দানকারী ইলাস্টিক তন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে অল্প বয়সেই ত্বকে কুঁচকানো ভাব ও বলিরেখা তৈরি করে এবং মেছতা, তিল, কালো বা বাদামি ছোপ ছোপ দাগ ফেলে। সুতরাং সব বয়সের নারী-পুরুষকে কিছু পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এখন প্রায় সবাই কমবেশি ঘরে বসে প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চা করতে চান। রূপচর্চার ধরনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। কর্মব্যস্ততায় হাতে সময় এখন অনেক কম। তাই কম সময়ের মধ্যেই রূপচর্চার জন্য উপায় বের করে নিতে হয়।
মেকআপ করার আগে একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবেন, মুখে মেকআপের প্রলেপ যতই থাকুক না কেন আপনার ত্বক যদি পরিস্কার না হয় কখনোই দেখতে সুন্দর লাগবে না। ত্বকচর্চার জন্য প্রতিদিন সকালে যা যা করতে পারেন- ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোমতো মুখ ধুয়ে নিন।
এরপর মুখ ভালোমতো মুছে নিজের পছন্দের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। মনে রাখবেন, ঘষে ঘষে মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। আঙুল দিয়ে আলতো করে লাগিয়ে নিন। যেহেতু সময় এখন শীতকাল, ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। সকালের দিকটায় পানি বেশ ঠান্ডা থাকে। এমন কনকনে ঠান্ডা পানি সরাসরি মুখে ব্যবহার না করাই ভালো। পারলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। আপনি যদি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকেন তবে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। মুখ ধুতে দিনে তিন-চারবার এমন ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন, যাতে আছে 'স্যালিসাইলিক অ্যাসিড'। এখনকার আবহাওয়ায় ক্রাবিং বিশেষভাবে জরুরি। কিন্তু দেখা যায় দৈনন্দিন ব্যস্ততায় ক্রাবিং করা হয়ে ওঠে না। সপ্তাহে অন্তত দু'বার ক্রাবিং করার অভ্যাস করুন।
এ ছাড়াও সকালে গোসলের অভ্যাস থাকলে গোসলের পর ভেজা নরম গামছা বা তোয়ালে দিয়ে হালকা হাতে মুখের ত্বক ঘষে নিতে পারেন। এ পদ্ধতি ক্রাবিংয়ের কাজে বেশ ফলপ্রসূ। ঠোঁট ক্রাবিং ও ময়েশ্চারাইজিং করার কথা অবশ্যই মনে রাখবেন। চিনির সঙ্গে লেবুর রস মিলিয়ে মিনিট পাঁচেক ঠোঁটে দিয়ে আলতো হাতে ঘষে তুলে ফেলতে পারেন। এতে করে ঠোঁটের মরা কোষ সরে যাবে।
স্নিগ্ধতা ও লাবণ্যের জন্য ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয়। বিভিন্ন মানুষের ত্বকের আর্দ্রতা বিভিন্ন রকম। গরমে লাবণ্যময় ত্বক পেতে কিছু টিপস মেনে চলতে হবে। চলুন সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
পানির অপর নাম জীবন। আর তাই গরমে পানি পান তো করতে হবেই, সেই সঙ্গে নিয়মিত ভালোভাবে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে মুখ ধুতেও হবে। দিনে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুতে হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শ পরিহার করে চলা উচিত।
উল্লিখিত সময়ে ঘরের বাইরে বের হলে প্রত্যেকের উচিত এসপিএ-১৫-এর অধিক স্বীকৃত উন্নতমানের 'এ' ও 'বি' উভয় রশ্মিকে প্রতিরোধকারী সানস্ট্ক্রিন ব্যবহার করে চলা।
যে কোনো মানের সানস্ট্ক্রিন সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা পর্যন্ত আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারবে। তাই ২ ঘণ্টা পর অধিক সময় রোদে থাকলে ফের সানস্ট্ক্রিন শরীরে লাগাতে হবে। প্রখর রোদে চলার সময় অবশ্যই ছাতা, মাথায় বড় আকারের টুপি ব্যবহার করা উচিত। রোদে বের হলে ফুলহাতা মোটা সুতির জামা পরিধান করা উচিত।
ত্বককে লাবণ্যময়, সুস্থ, সুন্দর, মসৃণ রাখতে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। বিভিন্ন ঋতুতে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের দেশি ফলমূল ও শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সাধ্যমতো সবারই উচিত স্বল্পমূল্যে প্রাপ্ত দেশি ফলমূল ও শাকসবজি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে আহার করা।
মাছ এবং মাছের তেলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ত্বকবান্ধব ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বককে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রাখে এবং ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় সহায়তা করে। তাই মাংস অপেক্ষা দেশি প্রজাতির মাছ খাওয়া ত্বকের জন্য উপকারী।
প্রতিদিন অন্তত দু'বার পুরো শরীরে লোশন, তেল, ক্রিম, গ্লিসারিন ইত্যাদি ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা।
মোটা ও শুস্ক চামড়াযুক্ত স্থান যেমন হাত, পা, ঠোঁটে সাদা পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভ্যাসলিন প্রয়োগ করা। গোসলের পর শরীরে সামান্য পানির স্তর থাকতে থাকতেই লোশন বা তেলজাতীয় ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা। হাত, পা, বগল, কুচকি ব্যতীত শরীরের অন্য সব স্থানে প্রতিদিন সাবান ব্যবহার না করাই শ্রেয়। সপ্তাহে দু'দিন পুরো শরীরে সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের শরীরের ত্বক অতি শুস্ক তাদের উচিত তেল বা গ্লিসারিনযুক্ত সাবান ব্যবহার করা। রোদের তাপ থেকে ত্বককে বাঁচাতে ব্যবহার করতে পারেন ল্যাভেন্ডার অয়েল।
সূর্যের তাপ থেকে হওয়া ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার। জেদি স্ট্রেচমার্ককে চিরতরে বিদায় জানাতে প্রতিদিন দাগ পড়া অংশে হেলিক্রাইসাম অয়েল ম্যাসাজ করুন। এটি ত্বকের পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করে। অল্প পরিমাণ নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোঁটা হেলিক্রাইসাম অয়েল। নিয়মিত ম্যাসাজ করলে ধীরে ধীরে দাগ হালকা হয়ে আসবে। অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য খুব ভালো হলো প্রিমরোজ অয়েল এবং অলিভ অয়েল। শুস্ক কিংবা স্বাভাবিক ত্বকে এই তেল খুব ভালো কাজ করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আসা ত্বকের শুস্কতা দূর করে ত্বককে সজীব এবং কোমল করে তুলতে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার।
মডেল: টিনি গাঙ্গুলি