Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

রমজানে মিশরের মানুষেরা কেন ‘লণ্ঠন’ জ্বালায়

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৭ এএম

রমজানে মিশরের মানুষেরা কেন ‘লণ্ঠন’ জ্বালায়

রমজানে কয়রোর রাস্তা সেজে ওঠে বর্ণিল ফানুসে।

আমরা ফানুস উড়াই, আর মিশরীয়রা ফানুস জ্বালায়। কারণ আরবিতে ‘ফানুস’ অর্থ প্রদীপ বা লণ্ঠন। প্রতিবছর রমজান এলেই মিশরের রাস্তা, দোকান ও বাড়ির বারান্দাগুলো জ্বলে ওঠে বাহারি লণ্ঠনে। মিশরের এই ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরোনো। আজ এই একবিশং শতাব্দীতে প্রযুক্তির বুনোঝড়ের মধ্যেও তা টিকে আছে—প্রদীপের মতো টিমটিম করে নয়, বরং দোর্দণ্ড প্রতাপে।

রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গেই মিশরের রাস্তাগুলো পুরোনো পোশাক খুলে যেন নতুন পোশাক জড়িয়ে নেয় গায়ে। ধুলো ঝেড়ে জেগে ওঠে নব–উল্লাসে। আপনি যদি রমজানে কায়রো বা অন্য কোনো শহরে যান, দেখবেন, রাস্তার দুই পাশে ঝুলছে বাহারি রঙের ফানুস। ছড়াচ্ছে কোমল নান্দনিক আলো।

শুধু রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলোতেই নয়, বাড়ির বারান্দা ও দোকানের সামনেও দেখতে পাবেন এই ঐতিহ্যবাহী লণ্ঠন বা ফানুস। মিশরে এখন পর্যন্ত যতগুলো পুরোনো আচার–অনুষ্ঠান টিকে আছে, এই ফানুস জ্বালানো তাদের মধ্যে প্রথম সারির। রমজানের শুরুতেই কেউ বাড়ির সামনের প্রধান দরজায় বড় একটি ফানুস ঝুলিয়ে দেয়। সন্ধ্যার পরপর তা জ্বলে উঠে দৃষ্টিনন্দন আলো ছড়ায়। কেউ কেউ ঝুলিয়ে দেয় বাড়ির বেলকনিতে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চর্চিত হয়ে আসছে এই সংস্কৃতি।

ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রিক শব্দ ‘ফ্যানাস’ থেকে ফানুসের উৎপত্তি। পরে যা আরবি শব্দ ভাণ্ডরে প্রবেশ করেছে। এর অর্থ বহনযোগ্য লণ্ঠন, যা থেকে আলো বের হয়।

ফানুস নিয়ে অনেক প্রচীন গল্প ও মিথ রয়েছে। এর উৎপত্তি কোথায়, তা নিয়ে রয়েছে অনেক মতভেদ। তবে একটি বিষয়ে সব ইতিহাসবেত্তাই একমত যে, মিশরীয়রাই প্রথম ফানুস চিনতে পেরেছিল এবং তারাই আরবের অন্যান্য দেশে ফানুস ছড়িয়ে দিয়েছে।

একটি গল্পে বলা হয়েছে, ৩৫৮ হিজরির রমজান মাসের পঞ্চম দিনে ফাতেমীয় খলিফা আল মুইজ প্রথম কায়রো শহরে প্রবেশ করেছিলেন। ওই দিন খলিফাকে স্বাগত জানাতে হাজার হাজার মিশরীয় নারী–পুরুষ জড়ো হয়েছিল কায়রোর পশ্চিমে বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরে। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল বলে প্রত্যেকের হাতে ছিল রঙিন লণ্ঠন ও মশাল, যাতে পথ আলোকিত হয়। ধারণা করা হয়, এর পর থেকেই মিশরে আনন্দের প্রতীক ও প্রিয় ঐতিহ্য হয়ে ওঠে রঙিন আলোকজ্জ্বল ফানুস।

অন্য একটি গল্পে শোনা যায়, ফাতেমীয় খলিফাদেরই একজন (তাঁর নাম জানা যায় না) রমজান মাসে পুরো রাত কায়রোর রাস্তা আলোকিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি মসজিদের ভেতর আলোকিত করার জন্য ছাদ থেকে ফানুস ঝোলাতে মসজিদের শেখদেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

তৃতীয় যে গল্পটি প্রচলিত, সেটিও বেশ মজার। বলা হয়, ফাতেমীয় যুগে নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কোনো প্রয়োজনে তারা যদি রাস্তায় বের হতো, তাহলে তাদের সামনে একজন কিশোর ছেলে লণ্ঠন বহন করত। এর অর্থ হচ্ছে, অন্য পুরুষদের সতর্ক করে দেওয়া যে, ওই লণ্ঠনবাহকের পেছনে একজন নারী রয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়ে এলেও নারীদের এই ঐতিহ্য মেনে চলতে দেখা যায়। এখন অবশ্য কায়রোর রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা ফানুস নিয়ে হাঁটে আর গান গায়।

এই রমজানেও কায়রো সেজে উঠেছে বহু বর্ণিল ফানুসে। এসব ফানুস কিংবা লণ্ঠন শুধু ঘর আর রাস্তাকেই আলোকিত করে না, বরং হাজার বছরের পুরোনো এক ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার সলতেতেও তেল জোগায়।

তথ্যসূত্র: মিশরীয় সংবাদমাধ্যম আল মাজাল্লা, দ্য ন্যাশনাল নিউজ ও ইজিপশিয়ান স্ট্রিট

ঢাকা টুডের একটি প্রকাশনা

অনুসরণ করুন